মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাই ফেসবুকে একর্মসূচি দেয়।
১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির আত্মগৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারের অধীনে পরিচালিত দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব-মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লক্ষ মা-বোনের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও গৌরবগাঁথা গণবীরত্বে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় বাঙালি জাতি।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। ’৪৮-এ বাংলা ভাষার দাবীতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ’৫৮-এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফার আন্দোলন, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান, ৬-দফা ভিত্তিক ’৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ খ্যাত কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন ও প্রভূত ঘটনা প্রবাহের মধ্য স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালো রাত্রিতে পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালির উপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু হলে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি সর্বাত্মক জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রাম শেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একসূত্রে গাঁথা, একটি অন্যটির পরিপূরক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করা যাবে না। যে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি মহান বিজয় অর্জন করেছে সেটার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালির প্রাণের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমগ্র বাঙালি জাতির মুক্তির স্পিরিটকে ধারণ করেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজ্জ্বল অর্জন চির আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সমগ্র জাতি যে চেতনার শক্তিতে বলীয়ান হয়েছিল স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা ও আদর্শ আজ সংকটের সম্মুখীন। বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতির পতাকা খামছে ধরেছে পুরনো শকুনেরা। অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দমিত করার অপচেষ্টার মধ্য দিয়ে বাঙালির সম্মিলিত শক্তি ও সামর্থ্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে। আজ বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, সংবিধান দিবস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত দিবস অর্থাৎ জাতীয় শোক দিবস রাষ্ট্রীয় আচার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যে রণধ্বনি বাঙালি মায়ের বীর সন্তানদের দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার জন্য জীবন বাজি রাখতে নির্ভীক করে তুলেছিল সেই ‘জয় বাংলা’-কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হাইকোর্টের রায়ও স্থগিত করা হয়েছে। এ সকল হীন ও ঘৃণিত পদক্ষেপ শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে তা নয়, এটা সুস্পষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাসের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ থেকে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের চিন্তাশীল ও প্রগতিশীল মানুষরাও (মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি যাদের অনুরাগ রয়েছে) এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। ফলে আজ সমগ্র বাংলাদেশের শহর, নগর,বন্দর ও হাট-বাজারের প্রতিটি দেয়াল ও খাম্বায় প্রজ্জ্বলিত নক্ষত্রের মতো দ্যুতি ছড়াচ্ছে ‘জয় বাংলা’ শব্দবন্ধ। ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের নিয়ন্ত্রিত সীমানার চৌহদ্দি পেরিয়ে কান পাতলেই বাতাসের তরঙ্গে ভেসে আসছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার প্রতি বাঙালির নির্ভেজাল আবেগের কারণেই সমগ্র জাতির চেতনার অন্দরমহলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গল্পের পুনর্পাঠ শুরু হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এই চেতনা ও ইতিহাসের উপর রাষ্ট্রীয় মদদে যত আঘাত করবে সমগ্র জাতি আটপৌরেভাবে তার সঙ্গে তত গাঁটছড়া বাধবে। এ দেশের মানুষ সকল সংকটময় মুহূর্তে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে শক্তি ও সাহস জুগিয়ে হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। অদূর ভবিষ্যতের দিনগুলোতেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক জনগণ অব্যর্থ প্রয়াসের মাধ্যমে দেশবিরোধী অপশক্তির সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে বলে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সমাগত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সমগ্র দেশবাসীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।
*১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর কর্মসূচি*
*১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার*
*** সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন।
***ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
***গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
*** মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা।
*** সাংগঠনিক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মহান বিজয়ের মাসের যে কোনো উপযোগী দিনে বিজয় র্যালি ও বিজয় মেলার আয়োজন।
এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংগঠনিক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুরূপ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪