“ত্রিশালে সংঘটিত ট্রিপল মার্ডারের ভিকটিমদের পরিচয় সনাক্ত, আসামী গ্রেফতার এবং ঘটনার রহস্য উন্মোচন” গত ২১/০৫/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ দুপুর অনুমান ১৪.০০ ঘটিকায় ত্রিশাল থানাধীন রামপুর ইউনিয়নের কাকচর নয়াপাড়া সাকিনস্থ প্রবাসী জনৈক কামরুল হাসান এর চাষের জমির আইলের পাশে মাংস বিহীন হাড় মাটির উপর পড়ে থাকার সংবাদের ভিত্তিতে অফিসার ইনচার্জ এর নেতৃত্বে ত্রিশাল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ০৩ টি অর্ধগলিত, পোকায় খাওয়া লাশের মধ্যে ০২ টি শিশুর লাশ ধান ক্ষেতের উপর এবং ০১ টি লাশ আইলের পাশে মাটিতে পুতে রাখা অবস্থায় দেখতে পান। মাটিতে পুতে রাখা লাশটি উত্তোলন করে মহিলার অর্ধগলিত লাশ হিসেবে সনাক্ত করা হয়। ঘটনাস্থলেই লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত, ময়নাতদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে প্রেরণের জন্য লাশগুলো ত্রিশাল থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে ভিকটিমদের আত্মীয়-স্বজন থানায় এসে লাশের পরিহিত কাপড়-চোপড় এবং অন্যন্যা বৈশিষ্ট দেখে পরিচয় সনাক্ত করেন। সনাক্তকৃত পরিচয় থেকে জানা যায় তিনটি লাশ যথাক্রমে ১) আমেনা খাতুন (২৫), স্বামী- আলী হোসেন, ২) আবু বক্কর সিদ্দিকি (৪) ও ৩) আনাছ (২ বছর ৬ মাস), উভয় পিতা- আলী হোসেন, সাং-কাকচর নয়াপাড়া, ইউপি-রামপুর, থানা- ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ। সনাক্তকৃত লাশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক হল মা এবং সন্তান। ভিকটিমের পরিবারসূত্রে জানা যায়, ভিকটিমের পরিবার আমেনা খাতুন কিংবা তার স্বামী আলী হোসেন এর সাথে গত বৃহস্পতিবারের পর থেকে মোবাইলে যোগাযোগ করতে না পেরে আলী হোসেন এর নিজ বাড়ীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, আলী হোসেন ঢাকার উদ্দেশ্যে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গত শুক্রবার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। তার পর থেকে আলী হোসেন পলাতক। ভিকটিম আমেনা খাতুন এর মা মোছাঃ হাসিনা খাতুন (৬৫), স্বামী-মোঃ আঃ খালেক, সাং-বাবুপুর, ইউপি-সাখুয়া, থানা- ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ তার মেয়ের জামাই আলী হোসনে (৩৫), পিতা-মোঃ আব্দুল হামিদ, সাং-কাকচর নয়াপাড়া, ইউপি- রামপুর, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ সহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ত্রিশাল থানায় অভিযোগ দায়ের করলে ত্রিশাল থানার মামলা নং-২৩, তারিখ-২২/০৫/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩০১/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০ রুজু করা হয়। মামলা দায়েরের পর জেলার ডিবি পুলিশের একটি চৌকশ টিম ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও আসামী গ্রেফতারের জন্য তথ্য প্রযুক্তি ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের মূল হোতা ভিকটিমের স্বামী আলী হোসেনকে গত ২২/০৫/২০২৪ খ্রিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। ধৃত আসামী আলী হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা প্রদান করেন। ভূমিহীন দিনমজুর আলী হোসেনের স্ত্রী আমেনা খাতুন ও দুই ছেলে নিয়ে অভাবের সংসারে। বড় ছেলের আবু বক্কর সিদ্দিক (৪) ও ছোট ছেলে আনাছ (২ বছর ৬ মাস)। আলী হোসেন চাচার দেওয়া জমিতে অনেক দিন ধরে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিল। সংসারে সারা বছর অভাব অনটন লেগে থাকত বলে বিভিন্ন সময় স্ত্রী ভিকটিম আমেনার নাম দিয়ে এনজিও থেকে টাকা তুলত। কিছুদিন পূর্বে সে এনজিও থেকে ১,৭০,০০০/-টাকা ঋণ নেয় কিন্তু সেই টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তাকে এবং তার স্ত্রীকে অপমান করা হত। প্রায়ই তার ছেলে ও বৌ না খেয়ে দিন কাটাত। ঋণের বোঝা, মানুষের অপমান, সংসারের অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতে ২/৩ মাস পূর্বে আলী হোসেন সিদ্ধান্ত নেয় তার স্ত্রী ও সন্তানদ্বয়কে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করবে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী আলী হোসেন গত ১৭/০৫/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ শুক্রবার রাত অনুমান ০২.০০ ঘটিকায় তার স্ত্রী ও সন্তান ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় স্ত্রী আমেনা খাতুনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। আমেনা খাতুন বিছানা থেকে নেমে ঘরের মেঝেতে গিয়ে বসলে আলী হোসেন তার পিঠের পিছনে গিয়ে তার গায়ে থাকা ওড়না দিয়ে আমেনা খাতুন এর গলায় পেঁচিয়ে মাটিতে ফেলে দুই হাতে টেনে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর প্রথমে ঘুমন্ত ছোট ছেলে আনাছ এবং পরে বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিকি এর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। আসামী আলী হোসেন তার স্ত্রী সন্তানের লাশ কাঁধে তুলে ঘরের পিছনের জঙ্গলে নিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে জনৈক ইউসুফ ও কালামের জমির মাঝখানে সীমানা বরাবর মাটিতে গর্ত করে তার স্ত্রী ও তার ০২ সন্তানকে পুতে রেখে ভোরে সেখান থেকে এসে আসামী ঘরে ঘুমিয়ে থাকে। আসামী আলী হোসেন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আনুমানিক সকাল ১০.০০ ঘটিকায় বাড়ি থেকে হরিরামপুর এলাকায় চলে যায় এবং বিকালে বাড়িতে ফিরে এসে মালামাল নিয়ে গফরগাঁও মশাখালী ষ্টেশন থেকে ট্রেনে কমলাপুর রেল ষ্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা করে। আসামী গ্রেফতার এড়ানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিল। উল্লেখ্য আসামীর বিরুদ্ধে ত্রিশাল থানায় ২০১২ সালে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় একটি মামলা রয়েছে। উক্ত মামলায় আসামী ০৫ বছর কারাভোগ করে ২০১৭ সালে আগস্ট মাসে জামিনে মুক্তি লাভ করে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। এ সংক্রান্তে আজ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে একটি