ঝিনাইদহে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি পানির নিচেই তলিয়ে গেছে। কোথাও তলিয়ে গেছে সবজি ক্ষেত, আবার কোথাও ডুবে গেছে ধানের বীজতলা ও সদ্য রোপণ করা আমনের জমি। এছাড়াও ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুর। পুকুর ভেসে গিয়ে হাজার হাজার টাকার মাছ পুকুর থেকে বের হয়ে গেছে। এরি ফলে ক্ষতিগ্রহস্ত হয়ে পড়েছে অত্র অঞ্চলের মৎস্য চাষিরা। সকলেই সরকারের কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
কৃষকরা জানান, ঝিনাইদহ সদর, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, কালীগঞ্জ, হরিণাকুন্ডু ও শৈলকূপা এই ছয়টি উপজেলার মাঠ ও বিলে টানা বৃষ্টির কারণে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি দ্রুত সরতে পারছে না। এতে সদ্য রোপণ করা আমন ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মরিচ, পটলসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেতও পানিতে তলিয়ে নষ্ট হচ্ছে।
সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের কৃষক রনিকুল ইসলাম জানান, আমার দশ কাটা জমির ধান পানিতে তলিয়ে আছে। কবে নাগাদ পানি সড়বে সেটা তো বলতে পারছিনা। তবে পানি সড়ে গেলে আবারও নতুন করে ধানের চারা রোপন করতে হবে।
সদর উপজেলার লাউদিয়া এলাকার কৃষক রিয়াদ হোসেন জানান, আমার চার বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে আছে। তবে পানি সড়ে গেলে আবারও নতুন করে ধানের চারা রোপন করতে হবে। কিন্তু সমস্য একটাই ধানের চারা পাবো কোথায়। ধান পানি হবার আগেই লাগানো সম্পন্ন হয়েছিলো। এখন ধানের চারা যদি না পায় তাহলে চলতি বছর আর ধান লাগানো সম্ভব হবেনা। তাই আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।
কোটচাঁদপুর উপজেলার গুড়পাড়া গ্রামের কৃষক শরিফ হোসেন জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আমার এক বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে আছে। পানি সড়ে গেলে আবারও ধানের চারা রোপন করবো আশা করছি। আগের রোপনকৃত সকল চারা পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আমাদের উপজেলার কৃষকরা ব্যপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। কমবেশী সকল কৃষকের ক্ষতি হয়েছে যা পুষিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গি গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, টানা বৃষ্টিতে আমার দুই বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে আছে। পানি সড়ে গেলে আবারও ধানের চারা রোপন করবো আশা করছি। আগের রোপনকৃত সকল চারা পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আমাদের উপজেলার কৃষকরা ব্যপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক অনিক বিশ্বস জানান, আমারসহ এলাকার অনেক কৃষকের আমন ধান ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। যানিনা এবার ধানের কপালে কি আছে। তবে আমার মতো চিন্তার ভাজ এলাকার সকল কৃষকের। কারন একটায় এবার আমন ধান ঘড়ে তুলতে পারবো কিনা।
মহেশপুরের কৃষক শহিদুল মন্ডল জানান, এলাকার অনেক কৃষকের আমন ধান ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। তবে যানিনা এবার ধানের কপালে কি আছে। আমার মতো চিন্তার ভাজ এলাকার অসংখ্য কৃষকের।
কালীগঞ্জ উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক বিপলু জানান, আমার দশ কাটা মরিচ ও দশ কাটা পটল ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। পানি সড়ার সাথে সাথে গাছগুলো মড়তে থাকবে। তাই এবার আমি মরিচ ও পটলের আবাদ করে যে টাকা খরচ করেছিলাম সে টাকা উঠার তো প্রশ্ন নেই বরং আরও লস হলো। কারণ আমি এখনও ক্ষেত থেকে কোন কাচাঁ মালামাল বিক্রী করতে পাড়িনি।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার চারাতলা গ্রামের কৃষক তুষার হোসেন জানান, আমার এক বিঘা জমিতে আমন ধান করেছিলাম কিন্তু টানা বৃষ্টির কারনে তা তলিয়ে গেছে। এখন আমি কি করবো সেটাই বুঘতে পাড়ছিনা।
শৈলকূপা উপজেলার ধলহরাচন্দ্র গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, আমার দশ কাটা মরিচ, দশ কাটা পটল, পাচঁ কাটা বেগুন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। পানি সড়ার সাথে সাথে গাছগুলো মড়তে থাকবে। আমি এ ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠবো বুঝতে পারছিনা।
অনেক এলাকায় জমিতে এখনও পানি জমে থাকায় নতুন করে ধান রোপণ করতেও পারছেন না কৃষকরা। এতে তারা চরমভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্ঠি চন্দ্র রায় জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা জলাবদ্ধতার রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। যেখানে যেখানে বাঁধের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিলো ইতি মধ্যে সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। বাকি সে সকল বাঁধ এখনও অপসারণ করা হয়নি সেগুলোও অপসারণের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ঝিনাইদহের ছয়টি উপজেলায় ইতোমধ্যে ৭ হাজার ৫০০ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।