ময়মনসিংহের ত্রিশালে অস্ট্রেলিয়ায় লোক পাঠানোর কথা বলে ৪ ব্যক্তির কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে প্রতারক উজ্জল আহমেদ। বিদেশ না যেতে পেরে তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদের মধ্যে একজন আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতারক উজ্জল দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলার বীর রামপুর ভাটিপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে উজ্জ্বল আহমেদ (২৮)। তার স্ত্রীর বড় ভাই অস্ট্রেলিয়া থাকেন এই কথা বলে তার মাধ্যমে পাশ্ববর্তী চকরামপুর গ্রামের ৪ জনকে অস্ট্রেলিয়া পাঠাবেন বলে উদ্বুদ্ধ করে ভুয়া ভিসা, বিমানের টিকিট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে সোহেল মিয়া (৪২) এর কাছ থেকে মোট ২২ লাখ টাকা। ফিরোজ মাহমুদ এর কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা, এনামুল এর কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা এবং জাহাঙ্গীর আলম তানভীর এর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নেন। এদের কাউকেই বিদেশ না পাঠিয়ে সে গা ঢাকা দিয়েছে। প্রতিদিনই মানুষ তাকে খোঁজতে বাড়ী যাচ্ছেন। কিন্তু সে ধরা ছোয়ার বাইরে। জানাযায়, প্রথম ধাপে সোহেল মিয়া ও ফিরোজ এবং প্রতারকের ছোট ভাই উৎপল মিয়াকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর জন্য ভুয়া ভিসা, বিমানে টিকিট ও ময়মনসিংহ কারিগরী প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে তিনদিনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করান উজ্জল। বিদেশ যাওয়ার জন্য সোহেল ও ফিরোজ কেনাকাটাও সম্পন্ন করেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ২১ তারিখে তাদের ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। যে অনুযায়ী তারা বিমান বন্দর যাওয়ার প্রস্ত নেন। কিন্তু সে সময় উজ্জল বিমানের টিকিট বাতিল বলে জানান এবং পরবর্তীতে তাদের তারিখ জানানো হবে বলে জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় পার হলেও উজ্জলের কোন হদিস পাওয়া যায়নি এবং মোবাইল ফোন বন্ধ। পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ নেই বলে দাবী করেছেন তার বাবা জামাল উদ্দিন। ওদিকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার জন্য নিজের সরকারী চাকুরিও ছেড়ে দেন ফিরোজ মাহমুদ। ময়মনসিংহ বিসিক অফিসে কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। এখন তিনি বেকার জীবন যাপন করছেন। ফিরোজ জানান, আমি সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়েছি। আমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। উজ্জলের সাথে হয়তো একটি চক্র রয়েছে যারা মানুষের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। আমি উজ্জলের বাড়ী গিয়ে তাকে পাইনি। সেখানে আরো অনেক লোক প্রতারিত হয়েছেন। যারা তাকে খুঁজছেন। আমি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কারণে চাকুরীটা ছাড়লাম। এখন সমাজে আমি হেয় হয়ে গেছি। উজ্জলের প্রতারণার শিকার ত্রিশালের সৌদী প্রবাস ফেরত ব্যবসায়ী মো. সোহেল মিয়া। তিনি দীর্ঘ ৯ বছর সৌদী আরবে থেকে দেশে চলে আসেন ২০২২ সালে। এরপর পর চকরামপুর বাজারে কাপড়ের দোকান দিয়ে ভালই চলছিল সংসার। স্থানীয় একজন ব্যবসায়ীর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন অস্ট্রেলিয়ায় মোটা বেতনে ভাল একটি চাকুরীর সুযোগ রয়েছে। সারাজীবনের উপার্জিত টাকা তিনি এক বছরের মধ্যে আয় করতে পারবেন এমন লোভনীয় প্রস্তাবে তিনি রাজি হন। দালাল উজ্জলকে তার বাবা জামাল উদ্দিনের সামনে দেন ২২লাখ টাকা। এ টাকার বিপরীতে চেক ও স্ট্যাম্প করা হয়। অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর জন্য তাকে অস্ট্রেলিয়া থেকে অনলাইনে চাকুরীর কাগজ, ভিসা দেওয়া হয়। বিমানের টিকিট তাকেও তিনদিনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় ময়মনসিংহ কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে। জানানো হয় বিমানের ফ্লাইটের তারিখ। সেখানে তাকে পাসর্পোট ও অন্যান্য কাগজ দেওয়া হবে। সোহেলকে আশস্ত করা হয় আপনার সাথে আমার ছোট ভাই উৎপল মিয়া ও আরোও কয়েকজন যাবে। তাদের সাথে সোহেলের মোবাইল ফোনে কথা বলায় আশস্ত হন সোহেল। দালাল উজ্জল তাদেরকে বলেন আমার স্ত্রীর বড় ভাই অস্ট্রেলিয়া থাকেন তিনি বিমান বন্দরে তাদেরকে রিসিভ করবেন। সব কিছু নিশ্চিত হওয়ার পর সোহেল তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেন এবং বিদেশ যাওয়ার জন্য সব কেনাকাটা সম্পন্ন করেন। আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নেন। বিমানের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার পর একটি ফোন আসে এবং জানানো হয় আপনার বিমানের টিকিট বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অন্যান্য ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীদের সাথে কথা বললে তারা আমাদেরকে জানায়, উজ্জ্বল আহমেদ যেনো আর কারও কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতে না পারে এবং কোনো পরিবার যেনো উজ্জ্বল আহমেদ এর জন্য নিঃস্ব হয়ে না যায়, তাই সকল দেশবাসীর কাছে অনুরোধ উজ্জ্বলকে দেখা মাত্র আইনের হাতে তুলে দিন।