মিহিরুজ্জামান সাতক্ষীরাঃ
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় আগুন দেয়ার পর লুট করা আগ্নেয়াস্ত্রের অধিকাংশই উদ্ধার হয়নি। ঘটনার পর প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও অস্ত্র,গুলি সহ লুন্ঠিত মালামাল জমা দেয়ার ক্ষেত্রে তেমন সাড়াও মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের ব্যবহৃত অস্ত্রের পাশাপাশি স্থানীয়দের জমাকৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি ফিরে পাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে।
এদিকে লুট করা অস্ত্রের অধিকাংশই স্থানীয় অপরাধীদের কাছে পৌছে গেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এসব অস্ত্র উদ্ধার না হলে সুন্দরবন ও সীমান্ত সংলগ্ন উপকূলীয় এ জনপদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির শংকা এলাকাবাসীর।
গত ৫ আগস্ট দুস্কৃতিকারীদের দেয়া আগুনে পুড়ে যায় শ্যামনগর থানা ভবন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগে স্থানীয় দুবৃর্ত্তরা সমগ্র থানা ভবন জুড়ে ব্যাপক তান্ডব ও লুটপাট চালায়। থানা সহ পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তি গত ব্যবহৃত জিনিসপত্র এমনকি আসবাবপত্রের পাশাপাশি থানার মালখানা ভেঙে সরকারি বেসরকারি অন্তত তিন শতাধিক ছোট-বড় আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে দুস্কৃতিকারীরা। এ সময় বিভিন্ন অভিযানে আটক সহ পুলিশের ব্যবহৃত প্রায় দেড় শতাদিক নুতন পুরাতন মটর সাইকেল লুট করে দুবৃর্ত্তরা। প্লেট বাটি থেকে শুরু করে চাল ডাল এমনকি ফ্রিজ ফ্যান ও চেয়ার টেবিল পর্যন্ত লুটে নেয় তারা।
জানা যায়, ঘটনার চার থেকে পাঁচ দিন পর অস্ত্র, গুলি এবং মটরসাইকেল সহ অন্যান্য জিনিসপত্র ফিরিয়ে দেয়ার জন্য স্থানীয়দের উদ্যোগে মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়। লুটপাটের সময় থানা ভবনে অবস্থানকারী অনেককে নানা ভাবে সহযোগিতার অনুরোধ করা হয়। তবে কোন কৌশলই অদ্যবধি কাজে আসেনি। আবার পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে কোন ‘মুভমেন্ট’ না থাকার কারনেও অস্ত্র সহ লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারে তেমন কোন ইতিবাচক সাড়াও মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও অধিকাংশ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় ক্ষতি গ্রস্থ পুলিশ সহ স্থানীয় আগ্নেয়াস্ত্র মালিকদের মধ্যে উৎকন্ঠা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাদঘাটা গ্রামের শেখ আফজালুর রহমান জানান, ভারতে যাওয়ার পুর্ব প্রস্তুতি হিসেবে পারিবারিক তিনটি বন্দুক ও রাইফেল থানায় জমা রাখেন। তবে লুটেরার দল সর্বস্ব নিয়ে যাওয়ার পর গত ১৪ দিনেও তিনি একটি অস্ত্রেরও সন্ধান পাননি।
আশিক হাসান বলেন,তার পিতার হাতের এক মাত্র বন্দুক খোয়া গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ‘মুভমেন্ট’ না থাকায় অস্ত্র ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা দিনে দিনে ফিকে হচ্ছে বলেও তার দাবি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের দুই সদস্য জানান, আগুন দিয়ে দুবৃর্ত্তরা দ্রুত থানা ভবনের মধ্যে ঢুকে পড়ায় অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে দ্রুত তারা সীমানা প্রাচীর টপকে যেয়ে প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করেন। এ সময় নিজেদের ড্রয়ার ও ব্যাগে রক্ষিত অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে ব্যক্তিগত অস্ত্র লুট করা হয়। সরকারি এসব অস্ত্র খোয়ানোর কারণে তারা মারাত্বক মানসিক পীড়ায় আছেন। ঋণের টাকায় কেনা মোটর সাইকেলের সন্ধান না পেয়েও হতাশ তারা।
এ দিকে স্থানীয় একাধিক সুত্রের দাবি থানা লুটের সময় উপজেলার গৌরিপুর এলাকার চিহ্নিত ডাকাত আবুল খায়ের ও আরিফ রাজ সহ অপরাধমুলক কর্মকান্ডের ইতিহাস থাকা অনেককে থানা ভবনে দেখা যায়। এছাড়া থানায় আগুন দেয়ার খবরে সুন্দরবনের আত্মসমর্পনকৃত সাবেক বনদস্যু বুড়িগোয়ালীনির আলম ও মাসুমকে থানা অভিমুখে রওনা হতে দেখে ছিলেন অনেকে। আবুল খায়েরের হেফাজতে অন্তত পাঁচটি অস্ত্র থাকার তথ্য দিয়ে কয়েকটি সুত্র জানায়, তার নেতৃত্বে কয়েকটি মোটর সাইকেল লুট করে দুস্কৃতিকারীরা।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি উপজেলা সদরের দেওল, পাশরবর্তী কৃষ্ণনগর, মাজাট, থানা সংলগ্ন চন্ডিপুর, সিরাজপুর, খানপুর, কাশিমাড়ী সহ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দুস্কৃতিকারীরা থানা লুটের সাথে সরাসরি জড়িত। লুন্ঠিত অস্ত্র ও মালামাল হাত বদল হয়ে সুন্দরবন তীরবর্তী এলাকা সহ নুরনগর ও কৃষ্ণনগরের মতো অপরাপর এলাকার অপরাধী চক্রের কাছে পৌছে যাচ্ছে বলেও দাবি তাদের।
শ্যামনগর থানার ওসি (তদন্ত) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, লুন্ঠিত অস্ত্রের খুবই সীমিত উদ্ধার হয়েছে, যা সরাসরি পুলিশ লাইনে জমা হওয়ায় সঠিক পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি। মটর সাইকেল সহ অন্যান্য মালামাল জমা দেয়ার কোন লক্ষন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। লুট হওয়া অস্ত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্রের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ পরবর্তীতে কাজ শুরু করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।