বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই পাস করেছেন। সেই সময় ‘পরীক্ষা না দিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীকে পাস করার অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে’ সত্যতা বের করার জন্য গঠিত হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। কিন্তু ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন জমা পড়েনি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার কারণ হিসেবে পক্ষপাতমূলক মনোভাবকে দায়ী করেছেন অনেকেই।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তদন্তই করেননি। সেখানে রিপোর্ট জমা তো অনেক দূরের কথা। কারণ, সদস্য সচিব হিসেবে তদন্ত কমিটিতে ছিলেন গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুলব হান্নান। সে কারণে এখানে পক্ষপাতের সম্ভাবনা আছে বলে অনেকে মনে করছেন। যার কারণে রিপোর্ট তৈরি করতে এত সময় লাগছে। আর এই কমিটির আহ্বায়ক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিউল ইসলাম জীবন ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে প্রথমে উপাচার্যের কাছে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন থেকেই এভাবে তদন্ত কমিটি ঝুলে আছে বিনা তদন্তে।
এই ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারের মিডটার্ম পরীক্ষায়। অভিযোগ রয়েছে, ওই পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই পাস করেছেন সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী, যিনি বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিষয়টি জানাজানি হলে গত ২২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে দীর্ঘ ৭ মাস পার হলেও প্রতিবেদন জমা দেয়নি কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও কীভাবে একজন শিক্ষার্থী পাস করতে পারে, সেটি দুর্নীতির বড় উদাহরণ। অভিযোগ রয়েছে, ঐশী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের প্রভাব খাটিয়ে পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে পাস করেছেন। তার সহপাঠীরাও দাবি করেছেন, তারা ঐশীকে মিডটার্ম পরীক্ষায় উপস্থিত থাকতে দেখেননি।
এ বিষয়ে একই বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে কিছুই বলার নেই, আমাদের সম্মানিত ভিসি স্যার তার কিছু একান্ত মানুষ নিয়ে নিজস্ব কিছু এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। তারা যখন যেটা চাইবে হয়তো তখন সেটা হবে, আর তারা তো অদৃশ্য শক্তির বাইরে কথা বলার মতো মানুষ না। সমস্যা হবে তদন্ত কমিটি গঠন হবে, কিন্তু প্রতিবেদন দেওয়া বা শাস্তির ব্যবস্থা করা সেটা হয়তো পারছেন না আমাদের সম্মানিত ভিসি স্যার, তার উপর ওয়ালার কথার বাইরে গিয়ে কিছু করতে। তবে সুস্পষ্ট একটি কথা বেরোবির প্রশাসনকে জানিয়ে দিতে চাই, মুলা কিন্তু একটি সাময়িক ফসল, সারা বছর পাওয়া যায় না। বেরোবির শিক্ষার্থীরা যেদিন আবারও ১৬ জুলাইয়ের মতো গর্জে উঠবে সেদিন কেউ গা বাঁচানোর জায়গা পাবে না। আজকে যাদের বাঁচাতে এত কূটকৌশল করা হচ্ছে, সেদিন কিন্তু তারা এগিয়ে আসবে না।”
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শুরুতে ঐশী ফোন রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরীক্ষায় আমি অংশগ্রহণ করেছি। তবে কখন, কবে পরীক্ষা দিয়েছেন এ বিষয়ে কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। তার বক্তব্য এবং উপস্থিতির বাস্তব প্রমাণের মধ্যে পার্থক্য থাকায় বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়। ১৬ জুলাই ছাত্রলীগের হামলায় নিহত আবু সাঈদের ঘটনার পর থেকে ঐশী আত্মগোপনে রয়েছেন।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অভিযুক্ত শিক্ষক, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দপ্তরের পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি দেয় প্রশাসন। তবে তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা কাজ করেছি। তদন্ত চলমান। শীঘ্রই রিপোর্ট দেব আমরা।