ময়মনসিংহে শহর কিংবা গ্রাম—সর্বত্রই বিদ্যুৎ আসা–যাওয়া নৈমিত্তিক ঘটনা। বিশেষ করে গরমে একটু পরপর লোডশেডিং দুর্ভোগ যেন আরও বাড়িয়ে দেয়। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, একদিকে উৎপাদন কম, অন্যদিকে চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে লোডশেডিং। এদিকে, লোডশেডিং এর দুর্ভোগ কমাতে ২০২২ সালের ১০ জুন চায়না সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কালিয়াকৈর-শম্ভুগঞ্জ ৪০০ কেভি ডবল বিদ্যুৎ সঞ্চালক সার্কিট লাইন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। উৎপাদিত বিদ্যুৎ পাবনা থেকে কালিয়াকৈর হয়ে ময়মনসিংহ আসার কথা। বিদ্যুৎ এর সার্কিট লাইনের নির্মাণ কাজটি ২০২৫ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ময়মনসিংহের ত্রিশালে স্থানীয় সুবিধা ভোগীর প্ররোচনায় এবং একটি ফ্যাক্টরির বাধার কারনে কিছু কিছু টাওয়ার নির্মাণ কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলার ১৪৩টি ইউনিয়ন ও মহানগরের ৩৩টি ওয়ার্ডের নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২টি ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন রয়েছে। তবে এ অঞ্চলের চাহিদা রয়েছে ১২০০ মেগাওয়াট যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ১৩২ কেভি সোর্স লাইনের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে সরবরাহ করায় যে কোন একটি লাইন ত্রুটি হলে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। এতে বিশেষ করে গরমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণত মানুষের। এ দুর্ভোগ নিরসনে ময়মনসিংহে কালিয়াকৈর-শম্ভুগঞ্জ ৪০০ কেভি ডবল সার্কিট লাইন নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ত্রিশাল অঞ্চলে স্থানীয় সুবিধা ভোগীর প্ররোচনায় এবং একটি ফ্যাক্টরির বাধার কারনে কিছু কিছু টাওয়ার নির্মাণে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মামলার মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ন কাজ বন্ধ করা হচ্ছে। এর ফলে যথা সময়ে এই গুরুত্বপূর্ন সঞ্চালন নির্মাণ শেষে ময়মনসিংহ অঞ্চলে নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, ময়মনসিংহ অঞ্চলে অনেকগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে, যা তেল-গ্যাস দিয়ে চালাতে হয়। এই তেল-গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক বেশি। দেশের অন্য অঞ্চল থেকে কয়লাভিত্তিক উৎপাদিত বিদ্যুৎ ময়মনসিংহ অঞ্চলে সঞ্চালনের জন্য বহুল প্রতিক্ষীত কালিয়াকৈর-শম্ভুগঞ্জ ৪০০ কেভি ডবল সার্কিট লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। লাইনটি চায়না সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সঞ্চালাইনটি নির্মাণ করা হলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন এবং বিতরন ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধিত হবে। তাছাড়া অধিক উৎপাদন খরচ বিশিষ্ট তেল-গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উপর নির্ভরতা কমবে তথা সরকারের আর্থিক সাশ্রয় হবে। স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও সমাজকর্মী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণার্থে ও বিদ্যুৎজনিত সমস্যা লাঘবের লক্ষ্যে কালিয়াকৈর-শম্ভুগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণ কার্যক্রম দ্রুততার সাথে শেষ করা অত্যন্ত জরুরি। এই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাদেরকে সরকারের তরফ থেকে নিক্রিয় করা উচিত। অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজে বাঁধা সৃষ্টি করার এখতিয়ার কেউ রাখে না। নগরের আমলাপাড়া এলাকার কামরুল হাসান নামের স্থানীয় আরেক সচেতন নাগরিক জানান, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ এই কালিয়াকৈর -ময়মনসিংহ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ময়মনসিংহ বিভাগ কে সংযুক্ত করলে এই অঞ্চল কে লোডশেডিং মুক্ত এবং ভবিষ্যতে শিল্পোন্নত ও অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল তৈরিতে অসামান্য অবদান রাখবে। এবং সর্বসাধারণ ও সর্বশ্রেনীর মানুষের বিদ্যুৎ সরবরাহ মানসম্মত হবে।এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ মুফিদুল আলম বলেন,ত্রিশালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের যে কার্যক্রম, সেখানে চাইনিজ একটা কোম্পানির সাথে সমস্যা আছে আমরা বিষয়টা জানি। দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। আশাকরছি খুব দ্রুত বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তার বলেন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর যখন যে সহযোগিতা চায় এটা দেওয়ার জন্য প্রশাসন সব সময় প্রস্তুত। গত ১৯ আগষ্ট আমাদের মিটিং হয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ এর লাইন স্থাপন নিয়ে স্থানীয়দের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে সেটি আমরা জেনেছি এবং এ বিষয়ে কমিশনার স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন। গত ১৭ আগষ্ট ঢাকায় মন্ত্রনালয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের মিটিং ছিলো। মিটিংয়ে এ সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরোও বলেন, কমিশনার স্যার বলেছেন, প্রশাসনের কাছে যদি সহায়তা চাওয়া হয়, পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে যেকোনো সহায়তা দেওয়া হবে। তারপরও দ্রুত যেন এ লাইনগুলো স্থাপন হয় সেটার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন কমিশনার স্যার।